RSI ইন্ডিকেটর নিয়ে এবারের আলোচনা। না, ভুল হল, গত তিন দশকে আমাদের শেয়ারবাজারে কিরকম বিবর্তন হয়েছে সেটা বোঝার চেষ্টা করব RSI-এর সাহায্যে। বিবর্তন বা এভোলিউশন শব্দটা শুনলেই চার্লস ডারউইনের ছবি মনে ভেসে ওঠে। সেই যে IX-X ক্লাসে পড়েছিলাম - Survival for the fittest.
Thursday, March 28, 2024
RSI & Evolution of Indian Stock Market
থিওরি অফ এভোলুইশনের মূল কথা - It is not the strongest species nor the most intellegent species that survives, it is the most adaptable to change. প্রজাতির বিবর্তনের ক্ষেত্রে সময়টা লক্ষ লক্ষ বছর আর শেয়ার বাজারে বিবর্তন হয় খুব অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই। Change is the only constant - এই কথাটা শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে সাংঘাতিকভাবে প্রযোজ্য। শেয়ার বাজারের বিবর্তনের সাথে সাথে চার্ট স্টাডি করার পদ্ধতি সময়োপযোগী না করতে পারলে গোড়াতেই গলদ থেকে যাবে। আর তার ফল - লুপ্ত ট্রেডার।
একটা কথা এখানে পরিষ্কার করে নেওয়া ভাল, RSI ভালো না মন্দ বা ইন্ডিকেটার বাদ দিয়ে শুধুমাত্র Price & Volume study বা হালে জনপ্রিয় হওয়া Smart Money Concept - এসবের তুল্যমূল্য বিচার আমাদের উদ্দেশ্য নয়। মূল বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য কিছুটা আলোচনা করতে হবে।
টেকনিক্যাল এনালিসিস বিষয়টা মোটামুটিভাবে দুই ধরণের - ক্লাসিক্যাল টেকনিক্যাল এনালাইসিস এবং মডার্ন টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস।
প্রথমদিকের চার্ট স্টাডি করা হত ক্লাসিক্যাল টেকনিক্যাল এনালিসিস পদ্ধতিতে। প্রাইস ভলিউম স্টাডি, ট্রেন্ডলাইন্স, সাপোর্ট - রেসিসস্টেন্স, বিভিন্ন ধরণের প্যাটার্নস এবং ডাউ থিওরি এই এনালিসিসের অংশ।
এরপর 1978 সালে একজন মার্কিন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার, J. Welles Wilder-এর একটি বই প্রকাশিত হল। নাম - New Concepts in Technical Trading System. এক ধাক্কায় চার্ট দেখার পদ্ধতি পাল্টে গেল। টেকনিক্যাল এনালিসিস এর উপর এখন পর্যন্ত যত বই প্রকাশিত হয়েছে, ধারে ভারে এবং প্রভাবে অন্য কোন বই এই বইটির হাজার মাইলের মধ্যে আসতে পারে নি। এককথায় যুগান্তকারী এই বই। এই বইটির মাধ্যমে আমরা পেলাম Relative Strength Index (RSI), Average True Range (ATR), Average Directional Movement Index (ADX, +DI, -DI) এবং Parabolic SAR.
রাতারাতি বদলে গেল চার্ট স্টাডির পদ্ধতি। শুরু হল ইন্ডিকেটর ভিত্তিক চর্চা এবং জন্ম হল মর্ডান টেকনিক্যাল এনালিসিসের।
উপরোক্ত ইন্ডিকেটরগুলোর মধ্যে RSI সবচেয়ে ভালো কাজে দেয়, ফলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ইদানিং কার্যকারিতা কমাতে এর ব্যবহার কমলেও পাঁচ সাত বছর আগেও RSI - কে বাদ দিয়ে চার্ট দেখার কথা ভাবাই যেত না।
সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় টপ টেন বা টপ ফাইভ কাউন্টডাউনের সূত্র ধরে টপ ফাইভ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরস অফ অলটাইম একটা লিস্ট তৈরি করলে তাতে RSI থাকবে এটা বলাই বাহুল্য।
RSI কি, কিভাবে দেখতে হয় প্রায় সবাই মোটামুটি জানি। তাও একটু আলোচনা করতে হবে। তারও আগে সামগ্রিকভাবে ইন্ডিকেটর স্টাডির ব্যাপারে একটা কথা বলা দরকার।
বুঝতে পারছি লেখাটা প্রচুর বড় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু উপায় নেই - বিষয়টাই যে অনেক বড় আর গভীর। দুটো পর্বে লেখা যেত, তাতে আবার খেই হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা। অন্যদিকে বাংলায় টাইপ করা সময়সাপেক্ষ হলেও সেই সময়টা বিষয়ের আরও গভীরে যেতে সাহায্য করে, উপরি পাওনা চিন্তা ভাবনার স্বচ্ছটা বৃদ্ধি।
কথা হচ্ছিল ইন্ডিকেটর নিয়ে। ট্রেড দুরকম হয়, রাজনৈতিক মিছিলের ভাষায় বলতে গেলে একধরণ হল "চলছে, চলবে" আর আরেকধরণ "চলবে না, চলবে না"।
চলছে, চলবে ধরণটাকে পরিভাষায় বলা হয় ট্রেন্ড কন্টিনিউয়েশন আর চলবে না, চলবে না হল ট্রেন্ড রিভার্সাল। ইন্ডিকেটরদেরও এই দুইভাগে ভাগ করা যায়। কিছু ইন্ডিকেটর ট্রেন্ড ফলোইং - যেমন Moving Average, MACD. অন্যদিকে RSI ট্রেন্ড রিভার্সাল বোঝার একটা হাতিয়ার। ইন্ডিকেটরদের আবার রোল ওভারল্যাপিং আছে, সেটা নিয়ে পরে কোন সময় বিশদে আলোচনা করা যাবে।
ট্রেন্ড রিভার্সাল সনাক্ত করার জন্য RSI-এর সাহায্য নেওয়া হয়। আমি ইন্ট্রা ডে না ইন্ট্রা উইক ট্রেডার সেটা বুঝে নিয়ে চার্টের টাইমফ্রেম নির্বাচন করা দরকার।
RSI মূলত দুভাবে দেখা হয় ওভারবট - ওভারসোল্ড পরিস্থিতি বোঝার জন্য। এখানে 14 দিনের RSI তে 70-30 লেভেল দেখা হয়। বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর 80-50 লেভেলও অনেকে দেখে থাকেন। এছাড়া আছে একেবারে মোক্ষম একটা জিনিস - ডাইভারজেন্স, পজিটিভ এবং নেগেটিভ। একজন চার্টিস্ট প্রথম প্রথম ডাইভারজেন্স পেলে প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে পড়ে, পরবর্তী কালে বার কয়েক ডাইভারজেন্স ট্র্যাপের শিকার হবার পরে উত্তেজনা খানিকটা কমে যায়।
RSI -এর ফর্মুলা বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখব দাম বাড়লে RSI বাড়ে, দাম কমলে RSI কমে। এক দেড় সপ্তাহে 5 -7% দাম বাড়লেই RSI 70 হচ্ছে, থিওরি অনুযায়ী ওভারবট। এখানে 14 পিরিয়ড RSI নিয়ে আমরা কথা বলছি, আর খেয়াল রাখতে হবে দামের পরিবর্তন এবং সময় যেটা বলা হচ্ছে, সেটা আক্ষরিক ভাবে বিচার করলে চলবে না। বিষয়টি বোঝার সুবিধার জন্য এভাবে বলছি।
অন্যদিকে এরকম দাম পড়লে RSI 30 চলে আসছে, ওভারবট, দাম আবার ঘুরে যাবার প্রবল সম্ভাবনা। অথচ আমরা আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি RSI 70 টকপানোর পর আসল ৱ্যালি শুরু হল, RSI দেখার জন্য একটা ভালো ট্রেড মিস হল।
এজন্য অনেকে বুল মার্কেটে চলাকালীন 80-40 অপটিমাইজেসন করেন। তাতে খানিকটা সুবিধা হলেও সমস্যাটা থেকেই যাচ্ছে। Andrew Cardwell RSI কে অনেকটা সময়োপযোগী করেছেন, কিন্তু তাতেও অনেক ফাঁক থেকে গেছে।
RSI কার্যকরী নয় একথা বলছি না, তবে ওভারবট ওভারসোল্ড লেভেলগুলি আর আগের মতন কাজে দিচ্ছে না। অনেক শর্ত রেখে RSI থেকে ট্রেড আইডিয়া বের করতে হচ্ছে।
একজন চার্টিস্ট তার এনালাইসিস শুরু করেন সাবজেক্টিভ পদ্ধতিতে, সেখান থেকে যেতে হয় অবজেক্টিভ জায়গায়। স্বাভাবিক, কারণ এনালিসিসের উদ্দেশ্য আমি কিনবো না বিক্রি করব নাকি আগের পসিশন হোল্ড করব সেটা নির্ধারণ করা। সেই পরীক্ষার সময় ব্রড কোশ্চেন না মাল্টিপেল চয়েস কোশ্চেন। শেয়ার বাজার ট্রেডারদের মাল্টিপেল চয়েস প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, তিনটে উত্তরের মধ্যে একটা বেছে নিতে হবে - Buy, Sell এবং None of the above.
একটা বিষয় খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করা দরকার, কেউ যদি RSI দেখে ভালো লাভজনক ট্রেড করেন, তার ক্ষেত্রে সেটাই পদ্ধতি - আগের পোস্টে যেমন বলেছিলাম। ট্রেডিং স্ট্রাটেজি নিয়ে পরে আলোচনা হবে।
যাই হোক, ডাইভারজেন্স নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন এখানে নেই, আমরা ওভারবট - ওভারসোল্ড নিয়ে ভাবছি। উদ্দেশ্য সময়ের সাথে সাথে ভারতীয় শেয়ার বাজারের বিবর্তন বোঝার চেষ্টা।
RSI ওভারবট হলে, সেটা 70 বা 80 যে লেভেলই হোক, ভাবা হচ্ছে যে যারা নীচের দামে কিনেছেন তারা বিক্রি করে লাভ ঘরে তুলবেন।
প্রফিট বুকিং লেভেল আসলে একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। ঠিক কতটা বাড়লে লাভ ঘরে তুলব সেটা তো একেক পেশাদার ট্রেডার বা ইনস্টিটিউশনাল ট্রেডারদের জন্য একেকরকম। অ্যামেচার ট্রেডারদের মতামত এখানে বিচার্য নয় কারণ এক. আমাদের বেশিরভাগেরই লাভ ঘরে তোলার কোন ভিত্তি নেই এবং দুই. দামের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে আমাদের সেরকম কোন ভূমিকা নেই।
কথা হচ্ছিল কতটা লাভ হলে ওস্তাদরা সন্তুষ্ট হবেন।তারা কি উদ্দেশ্য নিয়ে ট্রেড করছেন তার উপরে নির্ভর করছে তারা কোন লেভেলে প্রফিট বুক করবেন। তবে ট্রেডার বলেই সময় সময় তাদের ঘরে লাভ তুলতে হবে।
J. Welles Wilder RSI ইন্ডিকেটরটা বের করলেন 1978 সালে। ব্যাকটেস্টিং ডেটা তার মানে 1978 সালের আগে। সেই সময় শেয়ার বাজারে ওস্তাদদের যে পরিমাণ লাভ করলে কাজ চলে যেত, স্বাভাবিকভাবেই তার অনেক বেশী টাকা এখন লাভ করা দরকার। আমরা দেখেছি গত দশ - কুড়ি বছরে শেয়ার বাজারে টার্নওভার এবং দামের পরিবর্তন বহুগুন বেড়েছে।
কত টাকা যে বেশী টাকা সেটা কে বলবে? এই তো কিছদিন আগেই খবরে দেখলাম একটি ছেলের প্রাক বিবাহ অনুষ্ঠানে হাজার - বারোশো কোটি টাকা খরচ হল। পাত্রের মা যে নেকলেসটা পরেছিলেন তার দাম নাকি বহু দেশের GDP-র থেকে বেশী। অত দূরে যেতে হবে না, এই কলকাতা শহরেই তো পৌনে দু বছর আগে কার একটা খাটের নিচে পঞ্চাশ কোটি টাকা পাওয়া গেল।
এই ঘটনাগুলো উল্লেখ করছি চায়ের দোকানের সময় কাটানোর আড্ডা মারার মতো করে নয়, টাকার চাহিদা কত অঙ্কের হতে পারে সেটা বোঝার জন্য।
বিশ পঁচিশ বছর আগে দেখেছি RSI বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতো কাজে দিত। আবার সেই সময়েই দেখতাম আমেরিকান বাজারে, ডাউ জোন্স চার্ট বিশ্লেষণে কার্যকরী হচ্ছে না। তখন খটকা লেগেছিল, এখন বুঝি আমাদের শেয়ার বাজার এখন যে পর্যায়ে আছে, আমেরিকান শেয়ার বাজার ঐ সময়ে সেই পর্যায়ে ছিল। যেখানে ইনস্টিটিউশনাল ট্রেডারদের বহুগুণ লাভ করার প্রয়োজন শুধুমাত্র টিকে থাকার জন্য।
ব্যাপারটা আন্দাজ করা সহজ। ধরা যাক কোন আমেরিকান ইনস্টিটিউশনাল ট্রেডার ভারতের শেয়ার বাজারে ট্রেড করে। এবারে দেখুন এদের হেড অফিস নিউ ইয়র্ক, এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল অফিস সিঙ্গাপুর। এই দুই অফিসেরই একটা আনুপাতিক খরচ ভারতীয় শাখাকে বহন করতে হয়।
এরপর আসছে মুম্বাইতে অফিস - তার চড়া ভাড়া, ইলেকট্রিক বিল, মেন্টেনেন্সের খরচ। তারপরে রিসার্চ টিম, ফান্ড ম্যানেজারের মাইনে ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। অপারেশনের খরচও নেহাত কম নয় - অত্যাধুনিক কম্পিউটার, ব্লুমবার্গ টার্মিনাল, অ্যালগো সফটওয়্যার ও তার ডেভেলপমেন্ট - এই সবই মোটা খরচের ব্যাপার।
এই বিশাল অপারেশনাল এক্সপেন্স তো তুলতে হবে ট্রেডিং করেই। ভালো ট্রেড সেটআপ তো আর রোজ রোজ পাওয়া যায় না, একটা ভালো ট্রেড পেলে সেখান থেকে যতটা সম্ভব ফয়দা তুলতে হবে। শুধুমাত্র ব্রেক ইভেন হলে তো আর জল গরম হবে না, ফান্ডের যারা ইনভেস্টর তাদেরকেও তো ভালো লাভ দিতে হবে। নাহলে তারা ফান্ড উইথড্র করে নেবে।
RSI ওভারবট বা ওভারসোল্ড দেখে ট্রেড নেওয়া মানে কোন না কোন টাইম ফ্রেমে ট্রেন্ড রিভের্সালের সুযোগ নেওয়া। এটা বেশ বিপজ্জনক ট্রেড সেটআপ। সে আমরা যতই RSI উপর থেকে 70 ভেঙেছে বলে পজিশন নি না কেন।
এমতঅবস্থায় এদের পক্ষে RSI ওভারবট হয়েছে বলে কি ইনস্টিটিউশনাল ট্রেডাররা কেনা পজিশন লিকুইডেট করতে পারে? শুনতেই তো কেমন একটা হাস্যকর শোনাচ্ছে।
কোন ইন্ডিকেটরে ডাইভারজেন্সে পেলে দামে তার কনফার্মেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অষ্টদশ শতাব্দীর বিখ্যাত ফরাসি লেখক ও দার্শনিক ভলতেয়ারের একটা ঘটনা এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে।
একবার তন্ত্র-মন্ত্র নিয়ে আলোচনা চলছে। একজন জিজ্ঞাসা করলেন যে মন্ত্র উচ্চারণ করে একটা ভেড়াকে কি মেরে ফেলা সম্ভব?
উত্তরে নাকি ভলতেয়ার বলেছিলেন - হ্যাঁ, সম্ভব। তবে নিশ্চিত হবার জন্য ভেড়াটাকে আগে বিষ খাইয়ে রাখা দরকার।
শেয়ারের উর্দ্ধগামী দামে কতটা বিষ আছে তার উপরে নির্ভর করছে নেগেটিভ ডাইভারজেন্স কতটা কার্যকরী হবে। উইকলি চার্টে এরকম নেগেটিভ ডাইভারজেন্স হলে RSI কোন ট্রেডারের জীবনের সেরা ট্রেড উপহার দিতে পারে।
পরিশেষে বলি এই আলোচনা মূলত ক্যাশ আর ফিউচার মার্কেটে পজিশনাল ট্রেডিং এর পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছে। HFT বা হাই ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং এবং অপশন ট্রেডিং আবার অন্য গল্প।
Sunday, March 24, 2024
Lesson from Gita
লেখাটা বেশ বড় হয়ে গেল, তবে ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়লে শেয়ার বাজারে কাজে দেবে বলে আমার বিশ্বাস।
ভগবত গীতার একটা শিক্ষা সেভাবে গীতা চর্চা না করলেও মোটামুটি আমরা সবাই জানি। সেটা হল - কাজ করে যাও, ফলের দিকে তাকিও না, মা ফলেষু কদাচন। শেয়ার বাজারে ট্রেডিং করতে গেলে এই কথাটা মনে রাখা দরকার। কোন ট্রেড লাভজনক হলে আমরা আনন্দ করি, আবার লোকসান হলে মন খারাপ করে বসে থাকি।
একটা ট্রেডে এন্ট্রি নিলেই টেনশন শুরু, দাম উল্টোদিকে গেলে ভয় - না জানি কত টাকা লোকসান হবে। স্টপ দেওয়া থাকলেও চাপ কমে না, যদি স্টপ কেটে আবার ঘুরে যায়। আবার অনেকসময় স্টপের কাছাকাছি দাম এলে স্টপ সরিয়ে দেওয়া - এই জাতীয় অভিজ্ঞতা আমাদের সকলেরই কম বেশি হয়েছে। স্টপ কেটে গেলে আবার নতুন করে ভাবতে হবে, এতে ঘাবড়ে গেলে চলবে না - এসব জেনেও সেই অনুযায়ী চলা যে কত কঠিন তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। কিন্তু সমস্যা হল এর কোন বিকল্প নেই। মানি ম্যানেজমেন্ট তথা ট্রেড ম্যানেজমেন্ট ঠিকমতো না করতে পারলে কোন এনালাইসিস করেই সুবিধা হবে না।
ট্রেডিং গুরু জর্জ সোরোসের একটা উক্তি এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে - It's not whether you are right or wrong that's important, but how much money you make when you are right and how much you lose when you're wrong.
আমাদের ট্রেডিং জীবন "জানতাম কিন্তু করতে পারলাম না" এই আফসোসে ভর্তি।
কিন্তু আমরা এনালাইসিস বা ট্রেডিং স্ট্রাটেজি তৈরী করতে যতটা সময় দিয়ে থাকি, তার ভগ্নাংশও মানি ম্যানেজমেন্ট তথা ট্রেড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ভাবি না।
ট্রেড ম্যানেজমেন্ট মানে শুধুমাত্র স্টপ লস দেওয়া নয়। এখানেও অনেক চিন্তাভাবনার প্রয়োজন আছে, সেজন্যই বড় হলেও এই লেখাটা শেষ পর্যন্ত পড়া দরকার।
যেকোনো ট্রেডের ফলাফল হয় লাভ নয় লোকসান। নো প্রফিট নো লস ব্যাপারটা আদতে লোকসান, সময় আর এনার্জি নষ্ট হল যে। একজন সফল ট্রেডার হতে গেলে আরও গভীরে ভাবতে হবে। ভাবা উচিত যেকোনো ট্রেডের পরিণতি চার রকম হতে পারে - ছোট লস, বড় লস, ছোট প্রফিট আর বড় প্রফিট। প্রথম ধাপ - বড় লস ব্যাপারটাকে একেবারে মুছে ফেলতে হবে। পরের ধাপ ছোট প্রফিট নিলে চলবে না। একজন সফল ট্রেডারের ঘর করতে হবে ছোট লস এবং বড় প্রফিট নিয়ে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে লস করার থেকে অল্প প্রফিট তো সবসময়ই কাম্য, তাহলে সেই রাস্তা কেন বন্ধ করবো?
ঠিক কথা - অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই। এখানে সেই গ্লাস অর্ধেক খালি না অর্ধেক ভর্তি দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টা চলে আসছে। মোটামুটি সবার জানা একটা কথা এখানে মনে রাখতে হবে - Professionals do not do different things, they do things differently.
একটা ট্রেড নিলে স্টপ দিতেই হবে। মনে মনে নয়, স্টপ লস অর্ডারটা টার্মিনালেই থাকবে। এবারে দাম যত আমাদের পক্ষে চলতে থাকবে, স্টপ লস অর্ডারটা পরিবর্তিত হতে থাকবে - অর্থাৎ ট্রেলিং স্টপ লস। পদ্ধতিটা সকলেরই জানা, তবু একটু বিশদে আলোচনা করতে চাইছি যাতে পেশাদার ট্রেডারদের মনস্তত্ব খানিকটা আন্দাজ করা যায়।
ট্রেড এন্ট্রি নিচ্ছি একটা স্টপ লস দিয়ে, স্টপ কেটে গেলে পরের ট্রেড। অন্যদিকে দাম যখন আমাদের পক্ষে চলছে, স্টপ ট্রেল করে চলছি। মোটামুটি দুই দফা স্টপ মডিফাই করার পরে এটা দাঁড়িয়ে গেল প্রটেক্ট প্রফিট।
রিস্ক রিওয়ার্ড রেশিও, আগের একটা পোস্টে লিখেছিলাম যে প্রথাগত পদ্ধতিতে ব্যবহার না করাই ভালো। আমরা সকলে নিজেদের অভিজ্ঞতাতে কম বেশি দেখেছি যে 1:3 রেশিও মেনে একটা জায়গাতে পজিশন স্কোয়ার অফ করে লাভ ঘরে তুললাম, অথচ সেটা ধরে রাখলে আরও বহুগুন লাভ হত। বাজার আমাকে দিতে চাইছে 12% বা আরও বেশী লাভ, আর আমি 3% নিয়ে বলছি - যথেষ্ট, আর চাই না।
মোদ্দা কথা দাঁড়ালো প্রতিটা ট্রেডে লোকসান কত হতে পারে, সেটা গোড়াতেই জানা আছে। লাভ কত হবে সেটা জানি না।
শেয়ার বাজারে আমার নিজের ট্রেডিং অভিজ্ঞতায় বুঝেছি যে এখানে কম লাভ করে টিকে থাকা যায় না। হয় বড় লাভ হবে অথবা লোকসান।
ভগবত গীতার শিক্ষা অনুযায়ী জীবনের মতন ট্রেডিংকেও একটা নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে দেখতে হবে। ব্যাক্তির ধরণের সাথে তার ট্রেডিং স্ট্রাটেজি একসুরে মিলতে হবে। আপনি আদতে এগ্রিসিভ না ডিফেন্সিভ মানুষ সেটা চিন্তা করে সেই অনুযায়ী ট্রেডিং স্ট্রাটেজি তৈরী করুন। আর সঙ্গে সেই সুর মিলিয়ে থাকবে ট্রেড ম্যানেজমেন্ট স্ট্রাটেজি। তারপর শেয়ার বাজারে প্রয়োগ করে শুধু কাজ করলেই চলবে, ফলের আশা করার দরকার হবে না যেহেতু আপনার সিস্টেম আপনাকে দুর্দান্ত ফল দেবে।
এই শর্টকাট এবং চটজলদির যুগে যারা পুরোটা পড়লেন, বলা বাহুল্য তাদের ধৈর্য আছে। একজন ভালো, সফল ট্রেডার হওয়ার জন্য ধৈর্যশীলতা একটা অবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। অভিনন্দন নেবেন।
#TradeWiselyLearnContinuously
The Operator Game
শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে এবং আমরা কিভাবে একজন সফল ট্রেডার হতে পারি, এই গল্পটা পড়লে মনে হয় খানিকটা আন্দাজ করা যাবে।
একদিন সকালবেলা হাওড়া থেকে ট্রেডার্স এক্সপ্রেস ছাড়বে। আমি আর আমার এক বন্ধু এই দুজন রিটেল ট্রেডার স্টেশনে এসে দেখি দুজন অপারেটরও ঐ ট্রেনে করে দুর্গাপুর যাবে। দুই দলই সেখানে একটা সেমিনারে অংশগ্রহণ করে সন্ধ্যাবেলা আবার ট্রেন ধরে হাওড়া ফিরবো।
আমাদের কাছে এটা একটা বড় সুযোগ, অপারেটরদের দেখে ট্রেডিং করার কায়দা শিখে নিলে আর পায় কে। আমরা স্বাভাবতই দুটো টিকিট কাটলাম, অপারেটররা দুজনের জন্য কাটলো একটা টিকিট।
খটকা লাগছে, এই ট্রেনে তো চেকারদের সাংঘাতিক কড়াকড়ি - এরা ধরা পড়বেই ধরে নেওয়া যায়। বেশ আনন্দও হল, এতদিন এই অপারেটার ব্যাটারা আমাদের প্রচুর টাকা পকেটে পুরেছে - আজকে তার খানিকটা খসবে। ভাগ্যিস একই বগিতে কাছাকাছি বসেছি, এদের হেনস্থা আর অর্থদণ্ডের সাক্ষী থাকা যাবে।
যাইহোক, ট্রেন ছাড়ার ঘন্টাখানেক বাদে চেকার সাহেব হাজির, আমাদের টিকিট চেক করাবার মাঝে দেখলাম অপারেটার দুজন বাথরুমে ঢুকে গেল। খানিকক্ষণ বাদে চেকার বাথরুমের দরজা নক করাতে দরজা সামান্য খুলে একটা হাত বেরিয়ে এলো, তাতে একটা টিকিট। টিটি ঐ টিকিট পাঞ্চ কোনো চলে যেতেই আমি আর আমার বন্ধু ট্রেডিংয়ের কায়দা বুঝে গেলাম - এবার সেটা কাজে লাগানোর পালা।
পরের ট্রেডিং সেশনে, থুড়ি দুর্গাপুর থেকে ফেরার সময় আমরা একটা টিকিট কিনলাম - অপারেটর দুজন কোনো টিকিটই কাটলো না। এ আবার কি? কোন অ্যাডভান্স ট্রেডিংয়ের কায়দা? যাকগে, পরে দেখা যাবে - যেটা শিখেছি সেটা তো আগে কাজে লাগানো যাক।
ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষন বাদে টিটিকে আসতে দেখে আমরা দুজন তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম। একটু পরে দরজা নক করে টিটি টিকিট টিকিট বলতেই নতুন শেখা পদ্ধতিতে দরজা হালকা ফাঁক করে টিকিটটা ধরিয়ে দিলাম। কায়দাটা এত সহজ ভাবতে পারি নি। কিন্ত দরজার ওপারে কোনো সাড়াশব্দ নেই, টিকিটটাও পাঞ্চ করে ফেরত এলো না। ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে দুজনে সিটে এসে বসতে না বসতেই টিটি এসে টিকিট চাইল। এদিকে দেখি অপারেটর দুজন সিটে নেই। বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ার জন্য ফাইন নিয়ে নতুন টিকিট দিয়ে টিটি চলে যাবার পর নজরে এল অপারেটর দুজন বাথরুম থেকে বেরোচ্ছে। আর ওদের হাতে যে টিকিটটা আছে সেটা নির্ঘাত আমাদের। বুঝলাম ওরাই টিটি সেজে আমাদের টিকিটটা হাতিয়ে নিয়েছে আর অন্যভাবে আগের কায়দাটা কাজে লাগালো।
সঙ্গে সঙ্গে এটাও বুঝলাম নিজেরা তৈরী না হলে শেয়ার বাজারে গতি নেই।
এখন বুঝি একজন সফল ট্রেডার হতে গেলে অন্তত দুই থেকে তিন বছর সিস্টেমেটিক্যালি ট্রেড করে নিজের উপযোগী একটা কার্যকরী স্ট্রাটেজি তৈরী করা দরকার এবং আরও দরকার পরিবর্তনশীল শেয়ার বাজারের পরিস্হিতির উপর সেই স্ট্রাটেজি প্রয়োজন অনুযায়ী মডিফাই করা।
All reacti
Subscribe to:
Comments (Atom)